পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

আজকের প্রবন্ধের মাধ্যমে আলোচনা করব পেওনিয়ার কি, পেওনিয়ার একাউন্ট যারা ব্যবহার করবে, পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন ডকুমেন্ট, পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করে $২৫ আয়, পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড পাওয়ার জন্য করণীয় কি? 

ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে ফ্রিল্যন্সিং এর টাকা হাতে নেওয়ার পেমেন্ট গেটওয়ে গুলোর চাহিদা প্রতি নিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে সাপোর্ট করে বেশকয়েকটি পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। তার মধ্যে পেওনিয়ার অন্যতম।

যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তারা লেনদেন করার জন্য প্রথমেই পেওনিয়ার একাউন্ট খোলে থাকে। তাছাড়া অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা কাজ মার্কেট প্লেসের বাহিরে নিয়ে আসে এবং লেনদের করতে পেওনিয়ার বেঁছে নেয়।

পেওনিয়ার কি

পেওনিয়ার হচ্ছে একটি আমেরিকান আর্থিক সেবা প্রদান কারী প্রতিষ্ঠান। যা অনলাইনে সকল প্রকার ডিজিটাল লেনদেন এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা দিয়ে থাকে। পেওনিয়ার একাউন্ট তাদেরকে খোলতে হয় যারা ইন্টারন্যাশনালই ব্যালেন্স ট্রান্সফার করে থাকে। অথবা যারা ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে যুক্ত।

পেওনিয়ার একাউন্ট যারা ব্যাবহার করবেন

যারা ইন্টারন্যাশনালই ব্যালেন্স ট্রান্সফার করেন না তাদের পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ইন্টারন্যাশনালই ব্যালেন্স ট্রান্সফার করার প্রয়োজন হয় এবং যদি আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা দরকার।

একজন ব্যক্তি একের অধিক পেওনিয়ার একাউন্ট ব্যাবহার করতে পারবে না। তাই অপ্রয়োজনে কেউ পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবেন না। 

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন ডকুমেন্ট

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলতে হলে আপনার কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়বে। প্রতিটি ডকুমেন্ট রিয়েল হতে হবে। কোনও ফেইক ডকুমেন্ট দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করা যাবে না। পেওনিয়ার একাউন্ট দুইটি মাধ্যমে তৈরি করা যায়।

  1. Individual account -ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট
  2. Company account -কোম্পানি অ্যাকাউন্ট

যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য nid card/ passport/ driving license যে কোন একটি থাকতে হবে। আর যদি কোম্পানির জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন তাহলে ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে। 

পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করে $২৫ আয়

পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি $২৫ আয় করতে পারবেন। যদি কারো রেফারেন্স এর মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করেন তাহলে যার রেফারেন্স এ একাউন্ট খুলবেন সে পাবে $২৫ এবং আপনি ও  $২৫ পেয়ে যাবেন।

তবে এখানে একটি শর্ত রয়েছে একাউন্ট তৈরি করার পর আপনাকে $১০০০ আয় করতে হবে। তারপর দুই জনে $২৫ করে বোনাস পেয়ে যাবেন। তাছাড়া  সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রেফারেন্স এর মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করলে আপনার একাউন্ট দ্রুত approve হয়ে যাবে।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করার জন্য ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাহলে যে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি মোবাইল ব্যবহার কারী হয়ে থাকেন তাহলে Google Chrome ব্রাউজার ব্যাবহার করবেন এবং সেটা Dextop Mode করে নিবেন। তারপর নিচের পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করুন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

স্টেপ ০১ঃ পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে পেওনিয়ার এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। পেওনিয়ার এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে আসার পর নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।

  • যদি পূর্বে পেওনিয়ার একাউন্ট থাকে তাহলে Sign In (সাইন ইন) অপশন এ ক্লিক করে লগইন করতে পারবেন।
  • পেওনিয়ার এ নতুন একাউন্ট খুলতে হলে  Register (রেজিস্ট্রেশন করুন) এই দুইটি বাটনে ক্লিক করুন।

স্টেপ ০২ঃ আপনার পেশা কি সেটা সিলেক্ট করতে হবে।

  • ফ্রিলান্সার, সার্ভিস প্রোভাইডার বা এসএমবি হিসেবে কাজ করে থাকলে এই অপশন সিলেক্ট করুন।
  • অনলাইন সেলার বা ড্রপশিপার হিসেবে ই-কমার্স মার্কেট-প্লেস পেমেন্ট পেতে এই অপশন সিলেক্ট করুন।
  • অ্যাফিলিয়েট বা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ করলে এই অপশন সিলেক্ট করুন।
  • ভ্যাকে-শন রেন্টাল হোস্ট হিসেবে ভ্যাকে-শন রেন্টাল সাইট থেকে পেমেন্ট পেতে এটি সিলেক্ট করুন।
  • আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট, মার্কেট-প্লেস, বন্ধু ও পরিবারের সদস্যের মধ্যে লেনদেন এবং কার্ড ব্যাবহার করার জন্য Individual ( ব্যক্তি ) অপশন সিলেক্ট করুন।
  • ব্যক্তিগত একাউন্ট তৈরি করতে Individual ( ব্যক্তি ) অপশনটি সিলেক্ট করুন।

স্টেপ ০৩ঃ পেওনিয়ার একাউন্ট দিয়ে কি করবেন সিলেক্ট করতে হবে। 

  • আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট বা মার্কেট-প্লেস থেকে পেমেন্ট পেতে এটি সিলেক্ট করুন
  • বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে টাকা পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে
  • প্রিপেইড কার্ড অর্ডার করতে

স্টেপ ০৪ঃ পেওনিয়ার এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য এরপর নিবন্ধন করুন বাটনে ক্লিক করুন। 

স্টেপ ০৫ঃ আপনার বিজনেস এর ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে।

  • ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হলে Individual সিলেক্ট করুন
  • কোম্পানির  জন্য হলে Company সিলেক্ট করুন। 

তারপর একটি ফিল্ড আসবে সেটা পূরণ করতে হবে।

  • First Name – যে ব্যক্তির নামে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন সেই ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী নাম দিতে হবে। যেই ভাবে নাম দেওয়া থাকবে ঠিক সেইভাবে নাম দিতে হবে। যেমন যদি ভোটার আইডি নাম থাকে Md Rakib Khan তাহলে Md Rakib পর্যন্ত First Name এ দিয়ে দিবেন।
  • Last Name -  First Name এ দেওয়ার পর বাকি যে নামের অংশ থাকেবে সেটা Last Name এ দিয়ে দিবেন। 
  • Email Address – পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট ভেরি-ফাই করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি ভ্যালিড ইমেইল দিতে হবে। অ্যাকাউন্ট এর সকল প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার মেইলে পাঠানো হবে। আপনি যেই মেইল ব্যাবহার করেন সেটা দিতে পারেন। 
  • Date of Birth – যে ব্যক্তির নামে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হবে সেই ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী জন্ম তারিখ দিয়ে দিতে হবে। 

উপরের সবগুলো তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে Next বাটনে ক্লিক করতে হবে।

স্টেপ ০৬ঃ এই পর্যায়ে আপনার স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে।

  • Country- আপনি যে দেশে বসবাস করেন সেই দেশ সিলেক্ট করে দিতে হবে। সাধারণত এটি অটোমেটি আপনার ডিভাইসের অবস্থান অনুযায়ী নিয়ে নিবে। যদি না নেয় তাহলে সিলেক্ট করে দিবেন।
  • Street Adress- ঠিকানার তথ্য গুলো দিতে অনেকেই কনফিউশনে পরে যান। আপনি যেখানে থাকেন সেই ঠিকানা দিবেন নাকি ভোটার আইডি কার্ডে যে ঠিকানা দেওয়া আছে সেটা দিবেন। এর সমাধান হচ্ছে আপনি যেখানেই থাকেন না কেন ভোটার আইডি তে যে ঠিকানা দেওয়া আছে সেটা দিতে হবে।
  • City- এই জায়গাতে আপনার জেলা দিয়ে দিবেন। যদি অসুবিধা হয় তাহলে আইডি কার্ডের পিছনে আপনার জেলার নাম দেওয়া আছে। সেটা দেখে নিবেন।
  • Zip Code- অনেকের এই প্রশ্ন করে থাকে জিপ কোড কি? এটা হচ্ছে পোষ্ট অফিসের কোড। প্রতিটি পোষ্ট অফিসের একটি করে কোড থাকে। কোড দেওয়ার জন্য এন আইডি কার্ডের পিছেন দেখবেন কোড দেওয়া আছে। সেখান থেকে দেখে নিবেন।

এই প্রতিটি উত্তর দেওয়ার পর নাম্বার দিয়ে ভেরি-ফাই করতে হবে। নাম্বারে আসা ও-টিপি দিয়ে Next বাটলে ক্লিক করতে হবে। 

স্টেপ ০৭ঃ সকল প্রকার সিকিউরিটির জন্য এই অপশন গুলো পূরণ করতে হবে। কারণ প্রতিটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকার এর হাত থেকে বাঁচাতে এটি আবশ্যক।

  • Password- পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টকে প্রটেক্ট করার জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড এর ছোট হাতে এবং বড় হাতে ক্যারেক্টার দিয়ে দিবেন। তাছাড়া বিভিন্ন সেম্বল ব্যাবহার করতে পারবেন।
  • Security Question- যদি পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে কোন সমস্যা হয় তাহলে সিকিউরিটি প্রশ্নের উত্তর এর মাধ্যমে লগ ইন করতে পারবেন। Security Question দেওয়ার জন্য ড্রপ-ডাউন থেকে পছন্দ মতো সিলেক্ট করুন। 
  • National ID- পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইডি কার্ড সাবমিট করতে হবে। এন আইডি কার্ডে থাকা আইডি নাম্বার টি সঠিক ভাবে দিয়ে দিবেন।

সকল বক্স পূরণ করার পর নিচের কোডটি দিয়ে Next বাটনে ক্লিক করুন। 

স্টেপ ০৮ঃ এ পর্যায়ে আপনাকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে হবে। 

  • Bank Country- আপনি যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করেন সেটা কোন দেশের তা উল্লেখ করতে হবে। যদি বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সিলেক্ট করবেন। 
  • Currency- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর কারেন্সি কি টাইপের সেটা উল্লেখ করতে হবে। এখানে আপনারা একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন যদি বাংলাদেশি হয়ে থাকেন তাহলে BDT সিলেক্ট করবেন। আর যদি USD সিলেক্ট করেন তাহলে ট্রানজেকশন এ ফি বেশি কাটবে।
  • Bank Name- আপনার নামে যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টি রয়েছে সেটি সিলেক্ট করুন। ব্যাংক নেম এ ক্লিক করলে সকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর নাম দেখতে পারবেন। সেখান থেকে আপনার ব্যাংক একাউন্ট এর নাম বাছাই করুন।
  • Branch Name- আপনি যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টি যুক্ত করতে চাচ্ছেন সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেখানে তৈরি করেছেন সেই ব্রাঞ্চের নাম দিতে হবে। 
  • Account Holder Name- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যে ব্যক্তির নামে খোলা সেই ব্যক্তির নামটি এখানে দিয়ে দিতে হবে। অন্য কারো নাম দিলে হবে না। 
  • Account Number- এটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম্বার টা এখানে দিতে হবে। পেওনিয়ার এর টাকা এই অ্যাকাউন্ট নাম্বারে পাঠানো হবে। তাই সঠিক নাম্বার টি প্রদান করুন। 

সবগুলো উত্তর দেওয়া হয়ে গেলে প্রাইভেসি পলিসির জন্য দুইটি বক্স এ ঠিক মার্ক দিয়ে Submit এ ক্লিক করুন।

সব তথ্য সাবমিট করা হয়ে গেলে আপনার মেইলে ইমেইল ভেরি-ফাই করার জন্য একটি মেইল আসবে। সেই মেইলটা কনফার্ম করতে হবে। তারপর থেকে আপনি আপনার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে পারবেন। 

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড পাওয়ার জন্য করণীয়

যারা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট আছে তাদের পেওনিয়ার কার্ড পেতে হলে একাউন্টে $১০০ আনতে হবে। তারপর আপনি পেওনিয়ার কার্ড এর জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। এপ্লাই করার পর আপনার পোষ্ট অফিসে পেওনিয়ার কার্ড পাঠানো হবে। পেওনিয়ার কার্ড ব্যাবহার করার জন্য প্রতি বছরে $২৯ ফি দিতে হবে এবং পেওনিয়ার এ ব্যাল্যান্স আসতে প্রতি ট্রানজেকশন এ $৩ ফি কেটে নেয়।

শেষ কথাঃ পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

আশা করি আজকের প্রবন্ধের মাধ্যমে পেওনিয়ার কি, পেওনিয়ার একাউন্ট যারা ব্যবহার করবে, পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন ডকুমেন্ট, পেওনিয়ার একাউন্ট তৈরি করে $২৫ আয়, পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড পাওয়ার জন্য করণীয় কি এই সকল বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছেন।

ধন্যবাদ-সকলকে!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url